বেতগাছের ফলই বেতফল। অপ্রচলিত ফল হলেও এটি অনেকের কাছে খুবই প্রিয়। একে বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকা হয়—যেমন বেতফল, বেত্তন, বেথুন, বেথুল, বেতগুলা, বেতগুটি, বেত্তইন ইত্যাদি। বেতফল দেখতে গোলাকার, লম্বায় ১ থেকে ১.৫ সেন্টিমিটার। ছোট ও কষযুক্ত টকমিষ্টি। যেমন পুষ্টিকর তেমন সুস্বাদু ও ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ। খোসা শক্ত হলেও ভেতরটা নরম। বীজ শক্ত। কাঁচা ফল সবুজ ও পাকলে সবুজাভ ঘিয়ে বা সাদা রঙের হয়। থোকায় থোকায় ফলে। প্রতি থোকায় ২০০টি পর্যন্ত ফল হয়। বেতগাছে ফুল আসে অক্টোবর মাসে আর ফল পাকে মার্চ-এপ্রিল মাসে। ফুল ধরার আগে গাছ থেকে একধরনের মিষ্টি ঘ্রাণ আসে। তখন মৌমাছি, পিঁপড়া, মাছি রস খেতে বেতগাছে ভিড় জমায়। কিন্তু ফলের জন্য বেতের চাষ করা হয় না।
বেত একপ্রকার সপুষপক উদ্ভিদ। বাংলাদেশ, ভুটান, কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ভারত, জাভা ও সুমাত্রা অঞ্চলে দেখা যায়। বৈজ্ঞানিক নাম Calamus tenuis, যা Arecaceae পরিবারভুক্ত। তাছাড়াও আরো কয়েকটি বৈজ্ঞানিক নাম প্রচলিত আছে। আদি আবাস হিমালয়ের উষ্ণ এলাকা। বাংলাদেশে ছয় প্রজাতির বেতগাছ পাওয়া যায়। তাছাড়াও কাঁটাযুক্ত এই বেতগাছ বিভিন্ন প্রজাতির হয়ে থাকে—যেমন জায়ত বেত, গোলাফ বেত, কেরাক বেত, পাটি বেত ইত্যাদি। এদের কাণ্ড দেখতে চিকন, লম্বা, কাঁটাময় ও খুবই শক্ত এবং শাখাহীন। সরু ও নলাকার কাণ্ড প্রস্থে সাধারণত ৫ থেকে ১৫ মিলিমিটার। প্রতিটি কাণ্ডের আগা থেকে নতুন পাতা বের হয় ও বেড়ে ওঠে। কাণ্ড বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর নিচের অংশ পোক্ত হতে থাকে। কোনো ধারককে ধরে রাখার জন্য কাঁটাযুক্ত ধারক লতা বের হয়।
চিরসবুজ এই উদ্ভিদটি পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় ৪৫ থেকে ৫৫ ফুট এবং কখনো কখনো তার চেয়েও বেশি লম্বা হয়ে থাকে। সাধারণত গ্রামের রাস্তার পাশে, বসতবাড়ির পেছনে, পতিত জমিতে ও বনে কিছুটা আর্দ্র জায়গায় জন্মে। কিছুদিনের মধ্যেই বেত ঘন হয়ে ঝাড়েও পরিণত হয়। বেতগাছ জঙ্গলাকীর্ণ কাঁটাঝোপ আকারে দেখা যায়। বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ছাড়াও হাওরের কান্দাতে বেতগাছ জন্মে। এ অঞ্চলের আবহাওয়া ও জলবায়ু বেত চাষের বেশ উপযোগী হলেও বিলুপ্ত হতে চলেছে বেতগাছ এবং সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল।